নুরুল আবছার চৌধুরী:
কর্ণফুলী পেপার মিলকে নতুন উদ্যেমে চালু করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। পেপার মিলের ভিতরে নতুন কারখানা স্থাপনে ইন্টিগ্রেডেট পেপার মিলসহ বনায়ন, পেপারভিত্তিক কেমিক্যাল প্ল্যান্ট, সোডা অ্যাশ প্ল্যান্ট, সোডিয়াম সালফেট প্ল্যান্ট, বেসিক কেমিক্যাল প্ল্যান্ট (কাস্টিক সোডা, ক্লোরিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, ব্লিচিং আর্থ, টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, ফসফরিক অ্যাসিড ইত্যাদি) এবং সিনথেটিক পলিস্টার ফাইবার প্ল্যান্ট রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে বিসিআইসি শিল্প মন্ত্রানালয়ের কাছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা চাহিদা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। বন্ধ থাকা বাঁশ ও পাল্পউড মণ্ড দিয়ে কাগজ তৈরীর এফআরএম প্ল্যান্ট আবারো চালু করতে মিল কর্তৃপক্ষ একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনা করে কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী নদীর তীরে কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) প্রতিষ্ঠা করা হয়। কারখানায় বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন। কর্ণফুলী পেপার মিলের নিজস্ব সোর্স থেকে সংগৃহীত বাঁশ ও পাল্পউড (নরম কাঠ) দিয়ে মন্ড তৈরি করা হতো। সেই মন্ড দিয়েই তৈরি হতো উন্নতমানের লেখার কাগজ, মুদ্রণের কাগজ, করোগেটেড বোর্ড, মোমের প্রলেপযুক্ত কাগজ, আঠাযুক্ত ফিতা ও বিটুমিন কাগজ। কারখানাটি প্রতিষ্ঠার ২২-২৩ বছর যাবত ধারাবাহিকভাবে গুণগতমান কাগজ উৎপাদন ও দক্ষ ব্যবস্থাপনায় কোটি কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি, গাফেলতি, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা ও বিভিন্ন সমস্যার বেড়াজালে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের ভারে নুয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে মিলের কেমিক্যাল প্ল্যান্ট (সিসি প্ল্যান্ট) বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে পার্বত্যঞ্চলের নিজস্ব কূপ থেকে আহরিত কাঁচামাল বাঁশ ও নরমকাঠ (পাল্পউড) দিয়ে কাগজ উৎপাদন এর সকল প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। তৎসময় থেকে পুরোনো কাগজ ও আমদানি করা বিদেশী পাল্প ব্যবহার করার কারণে কাগজের উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এছাড়াও মিলের অভ্যন্তরে শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রে কাগজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় মিলটি কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। প্রয়োজনীয় পাল্পের অভাব, যান্ত্রিক ত্রুটি ও বিভিন্ন সমস্যায় গত অর্থবছর অর্ধেক সময় মিলটি বন্ধ রাখতে হয়েছে।
৫ আগস্টের পর কেপিএমকে নতুন উদ্যেমে চালু করার উদ্যোগ নেয় এ সরকার। কারখানার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা হয়। নতুন ব্যবস্থপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা (বাঁশ ও গাছ পাল্পউড বিশেষজ্ঞ) মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহকে চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর কেপিএমে নিয়োগ দেয়। নতুন এমডি যোগদানের পর থেকে মিলের বিভিন্ন দপ্তরের (জিএম) উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা করেন। মিলে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতি বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করায় কারখানার বিভিন্ন খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা সাশ্রয় হয় বলে মিলের শ্রমিকরা জানিয়েছেন।
কারখানার অভ্যন্তরে বিগত সরকারের পুরানো সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে মিলকে নতুনরূপে চালু রাখার দাবী জানিয়েছে মেহনতি শ্রমিক-কর্মচারীরা।
মিল সূত্র জানায়, বিদেশি পাল্প সরবরাহের জন্য গত অর্থবছর (২০২৩-২৪) ছয় দফা টেন্ডার আহ্বান করা হলেও অর্থ সঙ্কট, আন্তর্জাতিক বাজারে পাল্পের দাম বাড়তি ও নানান সমস্যায় ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশ গ্রহন করেনি।
নতুন ব্যবস্থপনা পরিচালকের আওতায় বিদেশী পাল্প কেপিএমে সরবরাহের লক্ষে সাত দফা টেন্ডার আহবান করার পর প্রতিটন পাল্প ৮৫ হাজার টাকা নিম্ন দরদাতা ঠিকাদারকে নিযুক্ত করা হয়। এর আগে প্রতিটন পাল্প আমদানী খরচ পড়তো প্রায় এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা। এ খাতে প্রতি টন পাল্প ক্রয়ে বিশ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। নতুন কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার আগামী তিনমাস পর মিলে পাল্প সরবরাহ করতে পারবেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে কারখানায় কোন পাল্প মজুদ নেই। এই সঙ্কটময় মুহুর্তে দেশীয় ছেঁড়া কাগজ ও দেশীয় খোলা বাজার সোর্স থেকে এলার্ম পাল্প সংগ্রহ করে কারখানা চালু রাখা হবে বলে মিলের ব্যবস্থাপনা সূত্রে জানা গেছে। কর্ণফুলী পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ বলেন, কেপিএম অনেক পুরোনো মিল। মিলের নিজস্ব পাল্প তৈরির প্ল্যান্ট বন্ধ থাকায় মূল্যবান অনেক যন্ত্রপাতিও অকেজো হয়ে যাচ্ছে।