আজ ৩০শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

উখিয়ায় আনাড়ি চালকদের দৌরাত্ম্য:টমটম কেড়ে নিল রশিদার প্রাণ!


শ.ম.গফুর: উখিয়ায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচল করছে অবৈধ টমটম, থ্রী হুইলার আর অটো বাইক। এসব যানবাহনের সংখ্যা কত তার হিসেবও কেউ জানেন না। এগুলোর নেই কোন রেজিষ্ট্রেশন, লাইসেন্স, রোড পারমিট আর চালকের ফিটনেস। সম্পুর্ণ অবৈধভাবে চলাচল করছে এসব যানবাহন। আর যারা এগুলোর মালিক, চালক, রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে আছেন, তাদের বেশির ভাগই মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিক।খেয়াল করে দেখবেন ১০/১৫ বছরের অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু-কিশোর এসব গাড়ীর চালক।

রশিদা বেগম (৩৫), স্বামী জসিম উদ্দিন।উখিয়ার নতুন ফরেস্ট অফিসের বিপরীত পার্শ্বে বসবাস তার।বাবা মোহাম্মদ আলী একজন বয়োবৃদ্ধ লোক। রশিদা একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় ( এনজিও’তে)একটি নিম্ন পদে চাকরি করতেন। এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে মোটামুটি সুখেই জীবন যাপন করতেন। প্রতিদিনের ন্যায় গত রবিবার ( ৬-এপ্রিল) খুব সকালে (আনুমানিক ৭ টায়) অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে টমটমে চড়ে রওয়ানা হয়ে ফুডিস রেস্টুরেন্টের পাশে আমগাছ তলার ঢালায় দু’টি টমটমের অভারটেকিং’র সময় ধাক্কা লেগে রশিদার মাথায় বড় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। কান থেকে রক্ত অঝোরে ঝরে। নিমিষেই রশিদা জ্ঞান হারিয়ে টমটমেই লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় তাকে। কোনভাবেই রশিদার জ্ঞান ফেরেনি। মাথায় হাতে, পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক আঘাতের কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ডেল্টাতে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। আইসিইউ-তে প্রায় ৫দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে, বুধবার৷ (৯-এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে বারটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।১০ এপ্রিল সকাল ১০ টায় উখিয়া কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাযে জানাজা শেষে উখিয়া কেন্দ্রীয় মসজিদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

টমটম দূর্ঘটনার শুরু থেকেই রশিদার ছোটভাই ব্যাংকার আলী, তার অন্য ছোটভাই ও বোন, রশিদার এক ছেলে, এক মেয়ে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল,চট্টগ্রাম মেডিকেল ও ডেল্টা হাসপাতালে রশিদার সুস্থতার আশায় নির্ঘুম রাত্রি পার করেছেন। তাদের প্রত্যেকের আশা ছিলো, ডাক্তারের চেষ্টায়, আল্লাহর রহমতে রশিদা সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম নিয়তি বাঘা-বাঘা ডাক্তারের প্রানান্তকর চেষ্টায়ও রশিদাকে সুস্থ্য অবস্থায় ফেরানো যায় নি। এটাই হয় তো তার ভাগ্য!

প্রায় প্রতিদিন ঘটছে এসব যানবাহনের দূর্ঘটনা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে,এভাবে আর কত প্রাণ গেলে থানা উপজেলা প্রশাসন,থানা ও হাইওয়ে পুলিশের টনক নড়বে? অবৈধ টমটম, ইজিবাইক, থ্রী হুইলারে সয়লাব উখিয়ার অলিগলি। সম্পুর্ণ বে আইনীভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব যানবাহন কেমনে চলে? এসব অবৈধ যানের বৈধতা পেতে কোন-কোন স্তরকে ম্যানেজ করে চলতে হয় সাধারণ মানুষ সব জানে। কিন্তু চোখ বুঝে নীরবে সব সহ্য করে যাচ্ছে। ৫- আগষ্টের পরে এসব দু:খজনক ব্যাপারগুলোর পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না বলে সাধারণ মানুষ মনে-মনে আশায় বুক বেধেছিল। কিন্তু তার কোন ইতিবাচক পরিবর্তন দীর্ঘ ৮ মাসেও চোখে পড়েনি। তবুও, আশাবাদি মানুষ। একদিন এসব দূর্ঘটনা থেকে মুক্তি পাবে সাধারণ মানুষ। তবে, এসব যানবাহনের দূর্ঘটনায় যাদের নিকট আত্মীয় মৃত্যুবরণ করছে বা পঙ্গুত্ব বরণ করছে, শুধু তারাই জানে এ ব্যথা কত গভীরের?। কবে নাগাদ এসব মৃত্যুর ফাঁদ থেকে পরিত্রাণ পাবে জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ আরিফ হোসাইন চৌধুরী বলেন,যানজট এড়াতে এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণে জন গুরুত্বপূর্ণ প্রায় বাজার,স্টেশন ও স্থানে ট্রাফিক পুলিশ নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে।অবৈধ যানবাহন ও অদক্ষ আনাড়ি চালকদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর