শেফাইল উদ্দিন
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার বদলি হওয়া ইউএনও সুবল চাকমাকে এবার বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছে সুবিধাভোগী উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা ও তার দোসররা। এ সংক্রান্ত ছবি ও সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আবারও আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়।
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকালে ঈদগাঁও উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের ব্যানারে ঈদগাঁও উপজেলার বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমাকে তার কার্যালয়ে বিদায় সংবর্ধনা দেয়।এতে দেখা যায় ঈদগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো:ইসমাইলসহ উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা।
এসময় বিদায়ী ইউএনওকে ক্রেস্ট ফুলসহ নানা কিছু দিয়ে সংবর্ধিত করে।ঐসময় উপস্থিতিদের মধ্যে নব্য দালাল চক্রের কতিপয় চিহ্নিত লোক ও একাধিক আওয়ামী দোসরদের দেখা যায়। তাকে সম্বর্ধনা দেয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এক নেটিজেন মন্তব্যে লিখেন,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাদাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। যেখানেই যাক মনোযোগ দিয়ে সমাজ তথা দেশের উপকারে কাজ করে যাবেন। এটিই আমার প্রত্যাসা। এ বিদায়ী ইউএনও এসব সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে,সে লক্ষ্যে এসব অনুষ্ঠানে কৌশলে কতিপয় জনপ্রতিনিধিকে দাওয়াত করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। উপজেলাবাসী আগামীতে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেননা এমন কর্মকর্তাদের বয়কট করার আহবান জানান।
এছাড়া ঈদগাঁও উপজেলার সচেতন লোকজনদের তাকে নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করতে শুনা যায়, তাদের দাবি এ উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা যোগদানের পর থেকে উপজেলাবাসীর উন্নয়নে কিছুই করেননি। বরং তার কার্যালয়কে আওয়ামী দোসর ও দালাল চক্রের কার্যালয়ে পরিণত করে উপজেলার আয়ের বিভিন্ন সরকারি সম্পদকে অপব্যবহার করে আওয়ামী চক্র ও তার পকেট ভারিতে ব্যস্ত ছিলেন।
এছাড়া উপজেলার সরকারি নানা প্রকল্পকে আওয়ামী করণ করে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বরাদ্দের নামে প্রতি প্রকল্প পিছু মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন ও জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করেছেন। মাসের পর মাস সরকারি বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনে নির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকলেও তা ব্যয় না করে দালাল চক্রের মাধ্যমে উপজেলার ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে তা দিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে সরকারি বরাদ্দ নয় -ছয় করেছেন নিয়মিত। তার অব্যাহত অপকর্ম আড়ালে রাখতে তিনি বিগত এক বছরে সরকারি বেসরকারি কোন অনুষ্ঠান বা দিবসে গণমাধ্যম কর্মীদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেননি।
সর্বশেষ বিগত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র -জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে প্রকাশ্যে হামলায় অংশ নেন ইউএনও সুবল চাকমা। যা তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ও স্থিরচিত্র ছড়িয়ে পড়ে। ঐদিন উভয়পক্ষের তীব্র সংঘর্ষে তার সারকারি গাড়িটিও পোড়ে যায়।কিন্তু আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রক্ষার মিশনে তিনি আওয়ামী সরকার পালানোর তিন মাস পরও মামলা করেননি। এমনকি আওয়ামী সরকার পতনের পরও তিনি আওয়ামী দোসরদের সাথে নব্য দালাল চক্রের সহযোগিতায় যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ রাখেন এবং উপজেলার আলোচিত বালিমহাল ঈদগাঁও নদী ও কালির ছড়া খালসহ ইজারার বাইরের আরো কিছু বালির জায়গা মোটা অংকের বিনিময়ে আইনে মারপ্যাঁচ ফেলে তাদের হাতে তুলে দেন। ঐ আওয়ামী দোসররা এখনো বালি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। এমনকি তার সময়ে ঈদগাঁও মাছ বাজারের পূর্বঅংশে শতবছরের বাজারের রাজস্ব দেয়া জায়গাটি রাতারাতি ব্যক্তিমালিকানাধীন দাবি করে কিছু লোক বহুতল ভবন নির্মাণ অব্যাহত রাখলেও তিনি নয়-ছয়ের বিনিময়ে নিরব ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ ঈদগাঁহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় নিয়ে যে তুঘলকি কান্ড ঘটেছে, তা নিরসনে ইউএনও সুবল চাকমার ভুমিকা নিয়ে উপজেলাবাসীর প্রশ্নের শেষ নেই। যা এখনো তদন্তাধীন এবং তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে এক পক্ষ ইতিমধ্যে পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে বলে একাধিক অভিযোগও করেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে জনহিতকর অহরহ অভিযোগ রয়েছে। দেরিতে হলেও তার বদলি হওয়ায় উপজেলাবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেছে এবং দ্রুত সময়ে যাতে সে ঈদগাঁও উপজেলা ত্যাগ করপ তার নতুন কর্মস্থল ফেনীর ছাগলনাইয়ায় চলে যান সে দাবি করেন এবং নবাগত ইউএনও যাতে যোগদান করে জনগণের কল্যানে কাজ করেন সে আশা প্রকাশ করেন।