শেফাইল উদ্দিন
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় বিমল চাকমা (১৮২৩৩) কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা স্বাক্ষরিত ২টি পৃথক প্রজ্ঞাপনে বিমল চাকমা সহ একই পদমর্যাদার ৬ জন কর্মকর্তাকে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হয়।
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইউএনও পদে নতুন নিয়োগ পাওয়া বিমল চাকমা এর আগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল শাখায় কর্মরত ছিলেন। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা বিমল চাকমার নিজের এবং শ্বশুর বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলায়।
বিমল চাকমাকে এর আগে মহেশখালীর ইউএনও হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হলেও সে আদেশ পরে বাতিল করা হয়। বিমল চাকমা ঈদগাঁও এর বিদায়ী ইউএনও সুবল চাকমা (১৮২৩৭) এর স্থলাভিষিক্ত হবেন। একই প্রজ্ঞাপনে ঈদগাঁও এর বিদায়ী ইউএনও সুবল চাকমাকে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ার ইউএনও পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে উপজেলার সচেতন মহল ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র -জনতা বিগত ইউএনও সুবল চাকমার মত পদায়ন হওয়া ইউএনও বিমল চাকমার বিরুদ্ধে আওয়ামী তোষণনীতি ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোন রকম ভুমিকা ছিল কিনা পূর্বকার কর্মস্থলে সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া ইউএনও সুবল চাকমা এক বছরেরও অধিক সময়কাল যাবত উপজেলা কার্যালয়কে অঘোষিত আওয়ামী কার্যালয়ে রুপ দিয়েছিল। উপজেলার সরকার -বেসরকারি বিভিন্ন কমিটিতে আওয়ামী ও তার অঙ্গসংগঠনের লোকজন ছাড়া কাউকে স্থান দেননি।
এমনকি উপজেলার সরকারি -বেসরকারি যে কোন কর্মসূচি কিংবা অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতির কোন প্রয়োজনই অনুভব করেননি তার অব্যাহত অনিয়ম আড়াল রাখার জন্য । সরকারি যে কোন বরাদ্দ গোপনে আওয়ামী ও তার অঙ্গসংগঠন এবং দালাল শ্রেণির কতিপয় লোকদের দিয়ে নয় -ছয় করে এসেছেন। তার বিগত এক বছরের অধিককাল সময়ে উপজেলা জুড়ে তিনি জনকল্যাণে কোন কাজই করেননি বলে সর্বমহলে অভিযোগ আছে।
বিশেষ করে তার সময়ে মাছ বাজারের কোটি টাকা মূল্যের জায়গা বেদখল করে বহুতল অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত , ঈদগাঁও বাজার ডিসি সড়কের উভয় পাশে জন চলাচলের রাস্তার উপর শতশত ভাসমান দোকান গড়ে উঠা , বাজারে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বাসস্টেশনে অব্যাহত যানজট নিরসন,বালিমহাল দখল-বেদখল,ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের চলমান অচলাবস্থা নিরসন,বাজারসহ উপজেলা জুড়ে অর্ধশত অবৈধ করাতকল,অর্ধডজানাধিক অবৈধ ইটভাটা,নিয়মিত মায়ানমারের অবৈধ গরু পাচার রোধ,বাজার অব্যবস্থাপনা দূরি করণ, অননুমোদিত হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ সরকার ও জনবিরোধী কোন অপকর্মের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি। উল্টো কিছু আওয়ামী দোসর ও দালালদের ব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা অর্জনের অহরহ অভিযোগ প্রচার আছে তার বিরুদ্ধে । এক কথায় উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নে কোটি টাকা অলস পড়ে থাকলেও তিনি জনগণের উন্নয়নে কাজই করেননি। সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকলেও নির্দিষ্ট কিছু আওয়ামী দোসর ও দালালদের মাধ্যমে উক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের নামে এলাকার ধনী, ব্যবসায়ী ও অপরাধী চক্রের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগও প্রচার আছে তার বিরুদ্ধে। সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে বরং নিজের উন্নয়নে যা করার তাই করেছেন নিরবে নিবৃতিতে।
বিগত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তিনি প্রকাশ্যে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে ছাত্র -জনতার উপর হামলায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং ঐসময় তার সরকারি গাড়ি আগুনে ভস্মীভূত হলেও তিনি এখনো পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রক্ষায় সরকারি সম্পদ ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনায় মামলা করেননি।ওই হামলার ঘটনায় এক আন্দোলনকারী ছাত্র নিহত ও ২০/২৫ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয় এবং এখনো অনেকে চিকিৎসাধীন। ওই সময় আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধের মুখে আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় পালিয়ে রক্ষার ভিডিও ফুটেজ ও স্থির চিত্র ভাইরাল হয়েছে বিভিন্ন মধ্যমে। সরকার পতন পরবর্তী সময়েও তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র -জনতার দাবির উল্টো আগেরমত সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী তোষণনীতি অব্যাহত রাখেন।এমনকি বদলির সময় পর্যন্তও তিনি আওয়ামী দোসরদের সাথে আতাত অব্যাহত রেখেছেন এবং অন্যরা কোন অভিযোগ -অনুযোগ নিয়ে গেলে তিনি তা কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। সরকার পতন পরবর্তী সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের যেসব সদস্যদের নাম করণ হয়েছে, দেশ জুড়ে সব বাতিল করা হলেও তিনি এখনো পর্যন্ত ঈদগাহ স্কুলের মার্কেটের বঙ্গবন্ধু নাম এবং শেখ রাশেল মিনি স্টেডিয়ামসহ আরো নানা স্থাপনার নাম বাতিলে কোন উদ্যোগ এখনো নেননি। যার ফলে সর্ব মহলে তার বদলি হওয়া স্বস্তি ফিরেছে। উপজেলার সর্বসাধারণ নবাগত ইউএনও এর কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে উপরোক্ত সমস্যা নিরসনের দাবি জানান।