আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা সহস্রাধিক ছাড়িয়েছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। বুধবার গভীর রাতে আফগানিস্তানের পাকতিকা ও খোস্ত প্রদেশে এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন আরও দেড় হাজারের বেশি।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলের গ্রামগুলোর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যে কারণে ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে। আফগানিস্তানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ভূমিকম্পের আঘাতে অনেক ঘরবাড়ি একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং কম্বলে ঢাকা কিছু মরদেহ মাটিতে পড়ে আছে।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন আইয়ুবী বলেছেন, উদ্ধার কাজ পরিচালনা, আহতদের কাছে চিকিৎসা সামগ্রী এবং খাদ্য পৌঁছানোর জন্য হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, কিছু গ্রাম পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এবং এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতেও কিছুটা সময় লাগবে।
ভূমিকম্পে নিশ্চিত মৃত্যুর বেশিরভাগই পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা প্রদেশের। এই প্রদেশে ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ২৫৫ জন নিহত এবং আরও ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইয়ুবী। এছাড়া খোস্ত প্রদেশে আরও ২৫ জন নিহত এবং ৯০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
বিবিসি বলছে, আফগানিস্তানের স্থানীয় সময় রাত দেড়টার পরপরই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে খোস্ত প্রদেশ; যখন অনেক মানুষ বাড়িতে ছিলেন, বিছানায় ঘুমাচ্ছিলেন। এক বিবৃতিতে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ভূমিকম্পে হতাহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
পাকতিকা প্রদেশের তথ্য বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আমিন হাজিজি বলেছেন, ভূমিকম্পে মৃত্যু ১ হাজার ছাড়িয়েছে এবং আহত হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি মানুষ।
রয়টার্স বলছে, গত আগস্টে বিদেশি সৈন্যদের বিদায়ের পর সশস্ত্র এই গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসায় আফগানিস্তানের সঙ্গে বেশির ভাগ দাতব্য সংস্থার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যে কারণে প্রাকৃতিক এই দুযোর্গ মোকাবিলা তালেবান সরকারের জন্য বড় ধরনের পরীক্ষা হতে পারে।
এক টুইট ইউরোপীয় ভূমধ্যসাগরীয় ভূমিকম্প কেন্দ্র (ইএমএসসি) বার্তায় বলেছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ভারতের প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ কম্পন অনুভব করেছেন। তবে পাকিস্তান এবং ভারতে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইএমএসসি ভূমিকম্পটির মাত্রা ৬ দশমিক ১ বললেও ইউএসজিএস বলছে ৫ দশমিক ৯। আফগানিস্তানের অনেক অঞ্চলে সম্প্রতি বন্যা দেখা দেওয়ায় আকস্মিক এই ভূমিকম্প কর্তৃপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। দেশটির দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বলেছে, গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যায় ১১ জন নিহত এবং ৫০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া অনেক মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আফগানিস্তান যখন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ধুকছে, তখনই প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। দুই দশকের যুদ্ধ শেষে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়ায় গত আগস্টে দেশটির ক্ষমতায় আসে এই গোষ্ঠী।
তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের প্রতিক্রিয়ায় অনেক দেশ আফগানিস্তানের ব্যাংক খাতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়া অনেক দেশ ও সংস্থা আফগানিস্তানে কোটি কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা স্থগিত করেছে। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থা এখনও দেশটিতে মানবিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।
জাতিসংঘের মানবিক কল্যাণবিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় (ইউএনওসিএইচএ) বলেছে, মানবিক সংস্থাগুলোকে উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়েছে আফগানিস্তান। সংস্থার উদ্ধারকারী দলগুলোকে ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় পাঠানো হচ্ছে।
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তারা আন্তর্জাতিক সহায়তায় স্বাগত জানাবে। প্রতিবেশী দেশটিতে সহায়তার জন্য কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি।