নিউজ ডেস্ক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যকার আলোচনার পর প্রচার মাধ্যমসমূহে সরকারিভাবে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের বিষয় তোলা হলে নরেন্দ্র মোদি বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেননি। বিচারের মুখোমুখি করতে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি তোলাই যেন অন্তর্বর্তী সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জন এবং তাতে মোদির অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ না করাই যেন সাফল্য!
নরেন্দ্র মোদি ও মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যকার আলোচনা সম্পর্কে দেশের মানুষ অবগত নয়। সরকারিভাবে কিছু বলা হয়নি। অনেকেই অনেক রকম ধারণা করেন। এর আগে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা এবং তাদের সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ ব্যাপারে তারা অত্যন্ত সোচ্চারই ছিলেন। মোদির সঙ্গে আলোচনার পর সরকারও মুখ খোলেনি। তারাও শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার দাবি তেমন একটা করছেন না। তাদের এই নীরবতাও রহস্যে ঘেরা। অধিকতর তাপর্যপূর্ণ ও রহস্যময় যে, অতি সম্প্রতি সরকারি প্রচারমাধ্যমসহ বেসরকারি বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে বলা হয়েছে, শেখ হাসিানকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হলেও চূড়ান্ত কিছু হয়নি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে, পরিস্থিতি বাধ্য করেছে সরকারকে বিষয়টি সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করতে। গোটা বিষয়টি সরকার যেভাবে চেপে যাচ্ছিল, তাতে এরকমটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক। প্রচারমাধ্যমে কথাবার্তা না হলে সরকার বিষয়টি সম্পর্কে নির্লিপ্তই ছিল। কিন্তু কেন এই সতর্কতা, সরকারের ভয়টা কোথায়?
এখন সরকারিভাবেই বলা হচ্ছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রী ও এমপিদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। দেড় শতাধিক সাবেক মন্ত্রী, এমপির দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এ যাবৎ নীরব থাকার পর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান নিজে সাংবাদিকদের ডেকে এ তথ্য দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তিমূলক ধারণা রয়েছে মনে করেই এসব তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে উল্লিখিত মহল মনে করেন।
আওয়ামী লীগের প্রতি সরকারি মহল সহানুভূতিশীল আচরণ করছে মর্মে বৈষম্যবিরোধী ও জামায়াতে ইসলামীর অভিযোগ। সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্যই আওয়ামী লীগ-বিরোধী তৎপরতা চালানো হচ্ছে। দৃশ্যমান এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি নেপথ্যের চিত্র ভিন্নতর। আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক ময়দানে নামানোর প্রস্তুতিও চলছে। আওয়ামী লীগের কর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকেই মিছিল করেছেন। গত ৪ এপ্রিলের এ ঘটনা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে ইদানীং বেশ বড় আকারের বিক্ষোভ করছেন তারা। আওয়ামী লীগ কর্মীরা এর আগে ঝটিকা মিছিল করেছেন। প্রেসক্লাবের পাশেই পুলিশ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ও রাস্তায় পুলিশ রয়েছে। তাদের সামনে মিছিল হয়। পুলিশ বাধা দেয়নি, চেষ্টাও করেনি। পুলিশের নির্লিপ্ততায় অসন্তুষ্ট সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে।
কূটনৈতিক সূত্রে আভাস পাওয়া যায়, মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের আলোচনায় শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরের দাবি জোরালোভাবে তোলাই হয়নি। বিষয়টি উঠে আসে আলোচনা প্রসঙ্গে। মোদি কর্তৃক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে আলোচনাক্রমে হাসিনার প্রসঙ্গ উঠে আসে। বিষয়টি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত করতে পারে মনে করেই বাংলাদেশের ভূমিকা ছিল অপেক্ষাকৃত নমনীয়।
যতদূর জানা যায়, ভারতীয় নেতা বাংলাদেশে আগামীতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, বিশেষ করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। নির্বাচনে বাংলাদেশের নিবন্ধিত অন্য দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি হবে না বলেও ভারতের দিক থেকে আশা প্রকাশ করা হয়। সূত্র: ঠিকানা নিউজ
Leave a Reply