কুমিল্লায় পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচারকালে ৯ কলেজছাত্রকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ২৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের সকলেই একাদশ থেকে ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত।
তাদের মাদকাসক্ত করে ব্যবসায় নামানো হয়। এ ব্যবসা তারা করতে না চাইলে ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেওয়া হতো। মঙ্গলবার নগরীর শাকতলা এলাকায় র্যাব-১১ কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।
র্যাব সূত্র জানায়, সোমবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার আমতলী এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হয়। এসময় একটি বাসে তল্লাশি করে ৯ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদেরকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে এক্স-রে করার পর পেটে ইয়াবার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এসময় বিশেষ পদ্ধতিতে পেটের ভিতর থেকে ২৩ হাজার ৯৯০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় কিশোরগরঞ্জর পাকুন্দিয়া থানার চরপাড়াতলা গ্রামের মো. তোফায়েল আহমেদ (১৯), ময়মনসিংহের পাগলা থানার দত্তের বাজার গ্রামের মোঃ মিনহাজুল ইসলাম রিফাত (২২), পটুয়াখালীর পটুয়াখালী সদর থানার পশুরবুনিয়া গ্রামের মোঃ সোহেল (২১), নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাতি গ্রামের মোঃ মিতুল হাসান মাহফুজ (২২), কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার চরপাড়াতলা গ্রামের মোঃ আশিকুল ইসলাম (১৯), গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার আমবাগ (কোনাবাড়ি) গ্রামের মোঃ সিয়াম ইসলাম (১৯), ময়মনসিংহের পাগলা থানার বাকশি (পাঠানবাড়ি) গ্রামের মোঃ রিশাত পাঠান (২২), একই জেলার পাগলা থানার নয়াবাড়ি গ্রামের মোঃ গোলাপ (২২), একই জেলার পাগলা থানার বাগশি গ্রামের মো. সেলিমকে (২২)।
র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা সকলেই শিক্ষার্থী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ময়মনসিংহের এক মাদক ব্যবসায়ী এই পদ্ধতি অনুসরণ করে টেকনাফ থেকে ইয়াবা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতেন। সে এলাকার তরুণদের টার্গেট করে। প্রথমে তাদেরকে গাঁজা ও ইয়াবা ফ্রিতে সরবরাহ করা হয়। ধীরে ধীরে তাদেরকে মাদকাসক্ত করা হয়। গত ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম পেটের ভিতরে ইয়াবা বহন করে ডেলিভারি দিতে সক্ষম হয় তারা। তবে তাদেরকে প্রাপ্ত টাকা না দিয়ে অর্ধেক টাকা ট্যাক্স হিসেবে রেখে দেয়। তরুণরা এই কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পূর্বের কাজের ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পুনরায় এই কাজে বাধ্য করা হয়।
তরুণরা আরো জানায়, টেকনাফে জনৈক মাদক কারবারী তাদের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায়। হোটেলের যে কক্ষে তাদের রাখা হয় সে কক্ষটি সারাদিন বাইরে থেকে তালা মেরে রাখা হয়। সন্ধ্যা নাগাদ মাদক কারবারীর ২ থেকে তিনজন লোক হোটেলে এসে ওই তরুণদের ইয়াবা পেটে বহন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এক্ষেত্রে প্রথমে কলার রস দিয়ে খেজুরের মতো ছোট ছোট পলিথিনে মোড়ানো ইয়াবার পোটলাগুলো পিচ্ছিল করে তারা গিলে ফেলে। এরপর নাইট কোচে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।
র্যাবের কোম্পানি অধিনায়ক জানান, অর্থের প্রলোভন এবং মাদকের নেশায় শিক্ষার্থীরা এ পেশায় সম্পৃক্ত হয়। মাদকের মূল হোতাদের বিষয়েও আমরা কাজ করছি।
Leave a Reply