বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠাকালীন ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নাম পুনর্বহালের দাবিতে ভিসির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. শওকাত আলীর কাছে স্মারক স্মারকলিপি তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশিদ, সমন্বয়ক সামসুর রহমান সুমন, রহমত আলী, আশিক, রিফাত, সাবিনা ইয়াসমিনসহ সমন্বয়করা।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘বিগত সরকার আমলের ফ্যাসিস্ট নীতি ছিল গণবিরোধী এবং জনতার মনোবাঞ্চনাকে উপেক্ষা করার নীতি। সেই নীতির একটু এদিক ওদিক হয়নি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে। রংপুরের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল ছিল রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকার রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজের নামফলক ও নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা দাবি করতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই ২০০৯ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির নামফলক ও নাম পরিবর্তন করে তার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে। যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা অস্বস্তিতে ভোগা শুরু করেন। কারণ বেগম রোকেয়া সরকারি কলেজ নামে নগরীতে আরো একটি প্রতিষ্ঠান আছে, যা ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত।’
‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক চতুরতার সাথে পরিবর্তিত নাম মহিয়সী রোকেয়ার নামে করেন, যাতে নাম পরিবর্তন নিয়ে যাতে নাম পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে নারী বিদ্বেষীসহ নানা ট্যাগ লাগিয়ে সহজে কণ্ঠরোধ করা যায়। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে আমরা সর্বোচ্চ সম্মান করি। তিনি সর্বজন স্বীকৃত জাতীয় ও বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব। সে কারণে আমরা পরিকল্পিতভাবে বদলে ফেলা প্রতিষ্ঠাকালীন নাম রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় (রবি) পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।’
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘যার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা আমাদের ভাই আবু সাঈদের তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তার নামে কোনো হল আমরা এ ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না। সে কারণে নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া হল নামকরণের দাবি জানাচ্ছি। কারণ শেখ হাসিনার নামে হল থাকলে আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ কখনই বন্ধ হবে না
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পুনর্বহাল এবং শেখ হাসিনার নামে হলের নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া হল করার দাবি মানা না হলে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে শিক্ষার্থীরা।’বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশিদ জানান, ‘শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’
শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি আমি পেয়েছি। তাদের দাবির সাথে আমি একমত। আমি মনে করি এ স্মারকলিপি ২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের একটি বড় অংশ। যত শিগগির সম্ভব যেন এ দাবি পূরণ করা হয়। সেজন্যই আমি সাথে সাথে স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি।’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নাম পরিবর্তন করে রাখে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং নামফলক থেকে সেই সময়কার তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নাম উঠিয়ে সেখানে শেখ হাসিনাকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উল্লেখ করেন।
মোঃইনামুল হক, রংপুর প্রতিনিধি,
Leave a Reply