আজ ৯ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ডজন মামলার আসামী যুবলীগ নেতা সাহেদ পাসপোর্ট করতে মরিয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইয়াবা কারবারি ও মোটরসাইকেল চোরসিন্ডিকেট এর হোতা ডজন মামলার আসামি যুবলীগের ফটোসেশন নেতা,মোঃ সাহেদ ও চৌকিদার নাছির উদ্দিন পাসপোর্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মামলা থাকার কারণে ভেরিফিকেশন মুলতবি থাকলে ও ঈদগাঁও থানার এক এএসআই ‘র মাধ্যমে মোটা অংকের টাকায় বিনিময়ে পাসপোর্ট করিয়ে দিতে জোর তদবির চালাচ্ছে বলে জানা গেছে ।

জানা যায়, উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ড পালা কাটা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মোঃ সাহেদ ঈদগাঁও বাজারস্থ সদর যুবলীগের নেতার মালিকানাধীন ফার্মেসিতে চাকরি করত। তার পাশাপাশি ঔষধ কোম্পানীর কথিত এমআর এর সাইনবোর্ড দিয়ে সখ্যতা গড়ে উঠে ইয়াবা সিন্ডিকেটের সাথে। ইয়াবা সিন্ডিকেটের হাত ধরে বেরিয়ে যায় ফার্মেসি থেকে। । টেকনাফ, কক্সবাজার থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে সারা দেশে পাঠাতো ইয়াবার বড় বড় চালান।

ঈদগাঁও উপজেলায় ইয়াবার পাশাপাশি গড়ে তুলেন গাড়ি চুরির সিন্ডিকেটে । সে সময প্রচার করে বেডায় তার পিছনে ঘুরে যুব লীগের নেতা কর্মীরা । তার প্রমাণ স্বরুপ জেলা যুব লীগের নেতা কর্মীরদের সাথে ফটোসেশন করে ব্যানার এবং পোস্টার ট্যাগিয়ে নিজেকে নেতা বানিয়ে নিতো। প্রায় বছর আগে কোটি টাকার ইয়াবা পাচারকালে উপজেলার, ইসলামপুর এলাকায় ঈদগাঁও থানার সাবেক এসআই ছিদ্দিক আহেমদের নেতৃত পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোঃ সাহেদ ও তার সহযোগী তিরস্কৃত চৌকিদার নাছির উদ্দিনকে গ্রোফতার করে। মোটা অংকের টাকা ও রাজনৈতিক তদবিরে রাতের অন্ধকারে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ, এরপর তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সম্পর্ক তৈরি হয় দেশের বিভিন্ন মোটর সাইকেল চোর সিন্ডিকেট ও ইয়াবা মাফিয়াদের সাথে ।

মূলত মোঃ নাছির উদ্দিন ছিলেন জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষেদর সাবেক চৌকিদার পচ্শিম পালাকাটা মৃত আবদুল জাব্বারের ছেলে। নাছির উদ্দিন তার বাবার মৃত্যুর পর স্থানীয় জনগন ও প্রতিবেশীদের মানবিক সহযোগীতায় চৌকিদার হিসাবে নিযুক্ত হয়, চৌকিদার হিসাবে এলাকার গরীব অসহায় ও বিধবা মহিলাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ভাতার কার্ড করিয়ে দেওয়ার নাম করে প্রতরনা করেছে । বর্তমান ০৮ নং ওয়ার্ড এর মহিলা মোম্বরের বোনের কাছ থেকেও কার্ড করিয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রামাণ পাওয়া যায়। গাড়িচুর সাহেদ ও ঈদগাঁও থানার জনৈক এএসআই এর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠার সাথে সাথে নিজ পেশাকে বৃদ্ধাআঙুল দেখিয়ে প্রবেশ করে ইয়াবা ও গাড়িচুরির স্বর্গরাজ্যে ,রাতারাতি নিজেকে কোটিপতি বানিয়ে নিতে বিয়ে করেন খুটাখালী ইউনিয়নের গর্জনতলির ইয়াবাকারবারিতে জড়িত পরিবার থেকে, পালটে ফেলেন নিজেকে। পরিষদে আসা যাওয়া করতেন চুরি করা অবৈধ গাড়িতে অথবা চুরি করা ইয়ামাহা এফ জেড কিংবা রয়েল এন্ডফিল এর মতো দামি গাড়িতে , আবার এ সব গাড়ি তার নিজস্ব ফোসবুক আইডি থেকে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে, কিন্তু তার অসহায় মাকে প্রতিবেশীর থেকে হাতপেতে জীবননির্বাহ করতে হয়।তাদের অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এবং এলাকার জনগনকে ভয়ে রাখার জন্য গড়ে তুলেছিলেন ‘বন্ধু নিকেতন ” নামীয় একটি কিশোর গ্যাং। এই গ্যাং এর নেতৃত্বে এলাকায় মোটর সাইকেল চুরি, ছিনতাই সহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করত । তাদের অবৈধ কাজের আর্থিক যোগান দিয়ে থাকে শুক্কুরের দোকান এলাকার চাল দোকানদার মোঃ জামাল উদ্দিন । সে চাল ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা করে যাচ্ছে শাহেদের পার্টনার হিসেবে। এলাকার লোকজনের দাবি জামাল উদ্দিন সামান্য চালের দোকানদার হয়ে তার আলীসান বাড়ি, জায়গা জমি সহ বিপুল সংখ্যক টাকা পয়সার মালিক বনে যান যা ইয়াবা সম্রাট শাহেদের অবদান বলে জানান । তাই শাহেদ ও নাছিরের আর্থিক কোন ক্ষতি সাধন হলে তাতে জামাল উদ্দিন অর্থের যোগান দিয়ে যান ইয়াবা ব্যবসায় ধরকষাকষির ঝামেলায় জামাল উদ্দিন কয়েক বার গন্যধোলাই খেয়েছে মর্মে শুক্কুরের দোকান এলাকার সবাই জানে।

ইয়াবা ব্যবসায় ধামাচাপা দিতে তথাকতিত ফসলি জমিতে শুরু করেন লোক দেখানো মাছের প্রজেক্ট। সাম্প্রতিক সময়ে শাহেদ এ চৌকিদার নাছির কর্তৃক জনৈক পুলিশের এএসআইকে নিয়ে একটি মিনিকার গাড়িতে (গাড়ি নং চট্রমে/গ ১১-১২৮৪)করে কক্সবাজার সীবিচ এ থার্টিফার্ষ্ট নাইট এ আমুদফুর্তির ভিডিও নাছির উদ্দিনের ফেসবুক আইডিতে লাইভে আসে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল হয়ে গেলে জানুয়ারী/২৫ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঈদগাঁও বাসস্টেশনে গাড়িটির রং পরিবর্তন করে কালো রং করা হয় এবং জনৈক এএসআইকে দিয়ে উক্ত গাড়িটি বিক্রি করার চেষ্টা চলমান রয়েছে ,কিন্তু কক্সবাজার বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ্ করে জানা যায় উক্ত গাড়িটি গ্রে কালারের ছিল এবং রেজিষ্ট্রেশনের মেয়াদ ১৯/১১/২০১৫ সালে শেষ হয়ে যায়, যা আর নবায়ন করা হয় নাই। উক্ত গাড়িটির রং পরিবর্তন ও হাইওয়েতে চলাচল সম্পুর্ন অবৈধ। গাড়িচুরির মূলহোতা শাহেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কক্সবাজার সদর মডেল থানার মামলা নং জি.আর মামলা নং- ৩০৬/২০২০ইং, জি.আর- ১২১/২০২১ইং (ঈদগাঁও থানা পেনাল কোড ১৮৬০। বিচারাধীন- বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল মাজিস্ট্র কক্সবাজার আদালত।

জি.আর-২৮১/২০১৬ইং, কর্ণফুলী থানার (চট্টগ্রাম) মামলা নং-২ (১০) ২০১৬ইং- অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রাম সহ অসংখ্য মামলা ও অভিযোগ থাকা সত্তে ও তা হতে ভুয়া অব্যহতিপত্র পাসপোর্ট অফিসে জমা দিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে পাসপোর্ট পাওয়ার আবেদন করেন।

স্থানীয়রা জানান,সে এলাকার পরিবেশ ও যুব সমাজ কে ধ্বংস করে দিয়েছে। তা ছাড়া শাহেদ ও পরিবারের বিরুদ্ধে সরকারি নাসি খাল দখল করে ঘর নির্মাণের অভিযোগ ও রয়েছে সম্প্রতি ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সে আগের কিছু পুলিশের সাথে তার সম্পর্ক কে কাজে লাগিয়ে নিরীহ মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে ফলাও ভাবে প্রচার হয় । পর থেকে সে গা ঢাকা দেয় এবং দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে উঠে পড়ে লেগেছে। পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করলে মামলা থাকার কারনে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন মুলতবি থাকলে ঈদগাঁও থানার এক এএসআইয়ের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকায় পাসপোর্ট করতে জোর চেষ্টা তদবির করছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় মেম্বার,ব্যবসায়ী সিরাজ, হেলাল, আব্দুর রহমান সহ অনেকে জানান, সাহেদ একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গাড়িচুর সিন্ডিকেট এর মূলহোতা এবং চৌকিদার নাছির ও চাল দোকানদার জামাল উদ্দিন তার মূল সহযোগী তা এলাকার সবাই জানে। বিভিন্ন মামলার আসামী হয়ে ও দেশের বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে এলাকায় এ খবর প্রচার হয়েছে।

স্থানীয় মেম্বার আবু তাহের জানান, চিহ্নিত অপরাধী এবং ইয়াবা ব্যবসায়ীয়দের অতিসত্তর আইনের আওতায় আনা দরকার। অভিযোগ উঠা সাহেদের সাথে কথা হলে জানান, সে যুবলীগ করত এবং মামলার বিষয়টি স্বীকার করলেও ও অন্যান্য অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে।

এ ব্যাপারে ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মছিউর রহমানের সাথে কথা হলে জানান, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এই চিহ্নিত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।এলাকাবাসী এই অপরাধী চক্রকে দ্রুত গ্রেফতার করতে পুলিশ সুপারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর