আজ ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

টেকনাফ-উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত:জড়িত দালাল চক্র


ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক:

কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার একাংশ ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে গত ৩ মাস ধরে। সবচেয়ে বেশী অনুপ্রবেশ চেষ্টায় রয়েছে টেকনাফ উপজেলার উলুবনিয়া, উখিয়া উপজেলার আঞ্জুমান পাড়া, ধামনখালী, বালুখালী সীমান্ত পয়েন্ট। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার স্পর্শকাতর সীমান্ত পয়েন্ট সদরের ইউনিয়নের ফুলতলী ও ঘুমধুম ইউনিয়নের নয়াপাড়া, জলপাইতলী, তুমব্রু’র ভাজাবনিয়া ও বাইশফাঁড়ী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রাতের আঁধারে এপারের চিহ্নিত দালালদের মাধ্যমে এপারে আসছে শতশত রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের ওপারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলমান যুদ্ধাবস্থার মধ্যেই তৎপর হয়ে উঠেছে দুই দেশের রোহিঙ্গা পারাপারের দালাল চক্রগুলো। অভিযোগ উঠেছে, অর্থের বিনিময়ে এই চক্রের মাধ্যমে নতুন করে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীগুলো অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে তৎপর রয়েছে। সম্প্রতি কয়েক মাসের মধ্যেই কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে সে সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য কোনও কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি।তবে অসমর্থিত সুত্রে জানা গেছে গত কয়েক মাসের ভেতত অন্তত লাখেরও বেশী  রোহিঙ্গা এপারের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে এদেশে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে।

গত মাসে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা এপারে গোপনে আশ্রয় নিয়েছেন।তারা জানান, প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে এসেছেন। বর্ডার পার হতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দালালকে টাকা দিতে হয়েছে।আর সীমান্তবর্তী স্থল এলাকা পার করে নাইক্ষ্যংছড়ি,তুমব্রু,ঘুমধুম ও বাইশ ফাঁড়ীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে তারা। ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে গড়ে ওঠা দালাল চক্রে ১০০ জনের মতো দালাল রয়েছে। মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধের সুযোগে কয়েকটি দালাল চক্র রোহিঙ্গা পারাপারে বাণিজ্য গড়ে তোলছে।সেসব দালালদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী উঠছে ঘুমধুমে।যাতে অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য টহল অব্যাহত রাখা ও আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করার পক্ষে জোরালো হচ্ছে।এতে রাতে দুই অংশের দালালেরা টাকা নিয়ে রোহিঙ্গা ঢুকাচ্ছে।কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে এপারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করাচ্ছে মিয়ানমারে বিভিন্ন মালামাল পাচার করা সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

তারা একেকজন রোহিঙ্গাদের কৌশলে এপারে এনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবং বিভিন্ন ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন মোটাংকের টাকার বিনিময়ে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দালালরা ১০/ ২০ হাজার থেকে শুরু ১ লাখ টাকার বিনিময়ে টেকনাফ-উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ অবৈধ পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব কাজে সীমান্তের ঘুমধুম-তুমব্রু, বাইশফাঁড়ীর মধ্যে জকির, ইউনুস,বাইট্রা শাহ আলম, শাহীন, বার্মাইয়া জামাই কামাল, নুরুল আমিন মনিয়া, নুরুল কবির পুতিয়া, রুহুল আমিন,আবুল হাসেম, সাইফুল, সরওয়ার, জহির,পাহাড় পাড়ার আলমগীর, জাহাঙ্গীর, জোবাইর, বাইগ্গা, রাঙ্গা শাহ আলম, বাক্কুইন্যা, হামিদুল হক, তোফাইল, ফরিদ আলমের ছেলে রাশেল, কামরুল, শমশু ড্রাইভারের ছেলে মোবারক, মাছন (নাপাং মাছন) নেলাচিং’র ছেলে মংচিং তঙচংগ্যা, মাথার ছেলে উছিংলা, বাইশফাড়ী দক্ষিণ পাড়ার রহুল আমিন, জামাল, সাবেক মেম্বার ছৈয়দ আলম, আলী আকবর ছাড়াও ঘুমধুম সীমান্তের কয়েকজন নারীও রয়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, রোহিঙ্গাদের টাকা বহন ও মালামাল পাচার কাজের সহযোগী হিসেবে। এদের মধ্যে অনেকের নামে ইয়াবা ও মাদক পাচারের মামলাও রয়েছে। তারা আবার অনেকেই সীমান্ত কেন্দ্রিক চোরাকারবারিও।এসব দালাল চক্রের সদস্যরা ঘুমধুমের বাইশফাঁড়ী, তুমব্রু পশ্চিমকুল, তেতুঁল গাছতলা, নেজার প্যারা ও ঘুমধুমের মধ্যম পাড়া পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে। অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের পাচারের কারণে ঘুমধুম সীমান্তের বিশালাকার ফসলা ধান পদপৃষ্টে বিনষ্ট হচ্ছে। পাচার করে আনা এসব রোহিঙ্গারা উখিয়ার হাজম রোড, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, তেলখোলা, জামতলী সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় স্হানীয়দের ভাড়া বাসায় বসবাস নিশ্চিত করেছেন।

তাছাড়া গত ৬ মাস ধরে মিয়ানমারে বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে হরেক রকম খাদ্যপণ্য, ওষুধপথ্য, ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন, সার,রড,সিমেন্ট, ঢেউটিন সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝেমধ্যে পাচারের সময় কিছু পণ্য সামগ্রী আটক করতে পারলেও বেশীরভাগ পণ্য সামগ্রী পৌঁছে যাচ্ছে ওপারে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন মানব পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুল বশর  বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশে দালাল চক্র জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে রাতের আধারে। আমি জানতে পেরেছি, রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মিয়ানমারের ওপাড়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে।ঘুমধুমের সচেতন ব্যক্তি মাষ্টার এম. সাজেদ উল্লাহ  বলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমার সীমান্ত কেন্দ্রিক উভয়মুখী পাচার চলছে। শুনেছি বিচ্ছিন্ন ভাবে রোহিঙ্গাদেরও অনুপ্রবেশ করাচ্ছে চোরাকারবারিরা। রাতের আঁধারে রোহিঙ্গাদেরকে আমাদের বসতবাড়ীর ঘেরা ভেঙে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক! এ ব্যাপারে সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারী বাড়ানো জরুরী বলে মনে করেন তিনি।নতুন করে একটা রোহিঙ্গাও যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। এমনিতেই ১২ লাখের বেশী রোহিঙ্গার আশ্রিত বসবাস রয়েছে আগে থেকেই। মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশংকা উড়ে দেওয়া যায় না। একজন রোহিঙ্গাও যাতে নতুন করে ঢুকতে পারে তার জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। স্থানীয় সংবাদকর্মী শ.ম.গফুর বলেন,স্থানীয় বাসিন্দাদের চেয়ে বহুগুণ রোহিঙ্গার বসবাস উখিয়া-টেকনাফে।তাদের জন্য বহুমুখি সমস্যায় ভোগতেছি স্থানীয়রা।রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা আপনভুমিতে পরবাসী।নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রেরণা আমাদেরকে নতুন করে আশংকায় ফেলেছে।আমরা উদ্ধিগ্ন।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন,রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে আছে।নতুন করে একজন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়াও আমাদের জন্য অনিরাপদ। রোহিঙ্গার কারণে নানা সমস্যায় জর্জরিত স্থানীয় জনগোষ্টি। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে স্থানীয়দের ভুমিকা রাখতে হবে,প্রশাসন কে সহযোগিতা করতে হবে। এদিকে নতুন করে প্রায় লাখের বেশীরোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গাদের আটক পূর্বক পূশব্যাক করা হলেও তারা বিজিবি’র টহল দল ফাঁকি দিয়ে পূণরায় অন্য সীমান্ত দিয়ে ঠিকই বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে কোনকিছুতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশরোধে কার্যকরী কোন টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছেনা।

ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ) গোলাম কিবরিয়া’র মতে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে পুলিশ বাহিনী সর্বাবস্থায় সতর্ক রয়েছেন। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাজহারুল ইসলাম জানান, সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসরত কিছু দালাল চক্র রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে, তাদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। দালালদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর