শিশির আজাদ চৌধুরী
স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি(SAD) এর আয়োজনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে “বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি : সংকট ও সম্ভাবনা”- শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ফেডারেশনসহ ১৫ টি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সাংবাদিকতার শিক্ষক আর রাজির উদ্বোধনী বক্তৃতা ও স্টুডেন্টস এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির আহ্বায়ক সভাপতি জোবাইরুল হাসান আরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি শাহরিয়ার ফারুক ভূঁইয়া বলেন,”যারা বিগত বছরগুলোতে ক্ষমতার সুবিধাভোগী ছিলেন তারাই ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চান বিপরীতে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা ছাত্ররাজনীতি চান। ক্যাম্পাসে আমরা দখলদারিত্বের- শো ডাউনের রাজনীতি করব না। ফ্যাসিবাদ আবার মাথাচাড়া দিলে আপনারা সবাই প্রতিরোধ করবেন এবং যদি সেটা আমরাও হই আপনারা প্রতিরোধ করবেন। আমরা সুস্থ ও মেধাবিকাশের রাজনীতি চাই। উই আর ওপেন; উই আর লুকিং ফর কন্সট্রাকটিভ ক্রিটিসিজম।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চবির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব বলেন,”কোন দল আদর্শের রাজনীতি প্রচার করে তা শিক্ষার্থীরাই খুঁজে নিবে; কারো উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। প্রযুক্তির বাংলাদেশে কাউকে ‘ট্যাগের রাজনীতি’ দিয়ে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের অধিকার সংশ্লিষ্ট ২৪ দফা দাবি পেশ করেছি।”
ছাত্র ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি আজাদ হোসেন বলেন,”লেজুড়বৃত্তিপনার জন্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চান আপনারা কি ঠিক একই কারণে জাতীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ চান? বিশ্ববিদ্যালয় কি দেশের বাইরের কোন জায়গা? আপনার দেশ জাহান্নাম হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কি ভালো থাকবে?” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য-বীমা বাধ্যতামূলক করতে হবে। আমার কোন ভাইবোনকে বোরকা,দাড়ি-টুপি কিংবা টিশার্ট-জিন্স ইত্যাদি পোশাকের জন্য হেনস্থা করা যাবে না।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি রিজাউর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে সবসময় জবাবদিহিতার মধ্যে রাখতে হবে।’কোন সমস্যা হলে ভাইকে জানাইও’- সংস্কৃতির মূলোৎপাটন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তেলানোর সংস্কৃতি বন্ধ করে প্রশ্ন করার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।”
স্টুডেন্টস এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধি আবির বিন জাভেদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় এক নীতিতে চলবে-ভুল যার জরিমানা তার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটে ভুলের জন্য আমাকে কেন টাকা দিয়ে তা সংশোধন করতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলোকে এসব ঠিক করার জন্য কাজ করতে হবে।”
রাষ্ট্রচিন্তা চবির প্রতিনিধি আল মাসনুন বলেন,”ছাত্রলীগ শিবির সন্দেহে যাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে সেটি প্রশাসনের সহযোগিতায় করেছে। তাই এই অবিচারের দায় কেবল ছাত্রলীগের নয় প্রশাসনেরও।”
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের প্রতিনিধি ধ্রুব বড়ুয়া বলেন,”লেজুড়বৃত্তি ছেড়ে জ্ঞান উৎপাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলোকে কাজ করে যেতে হবে। ছাত্রলীগসহ অতীতে যাদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে সেসবের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে হবে।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সাকিব মাহমুদ রুমি বলেন,”আমাদের ছাত্র সংগঠনগুলো ভালো কাজের বাহবা নিলেও খারাপ কোন ঘটনা ঘটলে বলে, ও আমার দলের কেউ না! এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ”
নারী অঙ্গনের প্রতিনিধি সুমাইয়া শিকদার বলেন, “বিগত স্বৈরাচারবিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোতে নারীদের বাঁধভাঙা অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু অতীতের মত বর্তমানেও রাষ্ট্রীয় কাজে নারীদের অংশগ্রহণে অনেক প্রতিবন্ধকতা কাজ করছে।এগুলো দূর করার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।”
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মুনতাসির মাহমুদ বলেন, “ছাত্ররাজনীতি না থাকাটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সংকট।”
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর চবির আহ্বায়ক জশদ জাকির বলেন,”আমি মনে করি না পৃথিবীর আলো, বাতাস ও বালুকণাও রাজনীতি বহির্ভূত। আঙ্গুলে পঁচন ধরেছে মানে এই না যে আঙ্গুল কেটে ফেলতে হবে। তাই ছাত্ররাজনীতি নয়, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতিই নিষিদ্ধ করতে হবে।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের প্রতিনিধি তারেক মনোয়ার বলেন,”একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি বজায় থাকবে সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু গত ষোল বছরে আমরা ভুলেই গেছি প্রকৃত ছাত্ররাজনীতি কী।আমরা আশা রাখি- লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্রসংসদের মাধ্যমে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখবেন। আমরা পাহাড়ে গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক অধিকার চাই যেখানে সবার অবাধে চলাফেরা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাকবে।”
ক্লাব এলায়েন্স অফ চিটাগাং ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন,”লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি আপনাকে “সহমত ভাই” হতে বাধ্য করবে। ঐ রাজনীতি আপনি কেন করবেন যা আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত করবে।বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এখন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য কোন ব্যানারের অপেক্ষা করে না।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের চবি প্রতিনিধি তামজীদ উদ্দিন বলেন,”প্রকৃত ছাত্ররাজনীতি কী তা আমাদের অনেকেই ভুলে গেছেন ফ্যাসিবাদের কারণে। যারা অধিকার আদায়ে রাজপথে ছিলেন তারা কখনো ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চান না। আমরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, সংস্কার চাই।”
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন চবির প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম রাকিব বলেন,” আমাদের ছাত্ররাজনীতি হোক সকল দল ও মতের মিলনস্থল। আমরা এমন একটি ক্যাম্পাস চাই যেখানে সবাই স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারবে।” অনুষ্ঠানের উপস্থাপক জগলুল আহমেদ বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে প্রশ্ন করার সংস্কৃতি চালু থাকবে।”
Leave a Reply