আজ ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কিশোর গ্যাং মুক্ত উপজেলার দাবিতে, বদরগঞ্জে ছাত্র জনতার মানববন্ধন ও থানা ঘেরাও কর্মসুচী পালিত


মোঃ ইনামুল হক,বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি>>>সারাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা ও গ্রাম মহল্লায় কিশোর গ্যাং এর উৎপাত যেমন দিন দিন বেড়েই চলেছে, তেমনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা ও এর ব্যতিক্র নয় , কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না তরুণ প্রজন্মের কিশোর গ্যাং সদস্যদের।বিভিন্ন অপরাধে জরিয়ে পরছে কিশোরেরা,যেমন মাদক সেবন,চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই,ও নারী কেলেঙ্কারিসহ সকল অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পরেছে। তরুণ প্রজন্মের কিশোরদের কাজে লাগিয়ে সুযোগ নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন অপরাধ চক্রের নেতারা। তার সাথে ফায়দা লুটতে সুযোগ সন্ধানী রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গ। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় ঘটছে কিশোর অপরাধ।গত ৪ জানুয়ারি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বদরগঞ্জ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুন্না ইসলামকে পশু কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত ও জখম করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি লক্ষ্য করে তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও তার শারীরিক অবস্থার অপরিবর্তিত থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় সে এখন ও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।গুরতর আহত ঐ শিক্ষার্থীকে জখমের প্রতিবাদে ও বদরগঞ্জ উপজেলা কিশোর গ্যাং মুক্ত করার দাবীতে মানববন্ধন ও থানা ঘেরাও কর্মসুচি পালন করেন সাধারণ জনতা শিক্ষার্থীরা।মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে বদরগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ওই মানববন্ধন পালিত হয় পরে, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কিশোর গ্যাং মুক্তকরণের দাবিতে থানা ঘেরাও করে।সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন। এ সময় থানা পুলিশের কর্মকর্তা অবিলম্বে আসামি গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে সেখানকার উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।মানববন্ধনে গোপাল ব্যানার্জী, মোনায়েম কবির, সুমন সর্দার ও ফিরোজ শাহ সাংবাদিকদের জানান, সম্প্রতিকালে বদরগঞ্জ উপজেলায় উদ্বেগজনক হারে দেখা দিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রপ। এতে করে ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে জমিদখল, বালুমহাল দখল, চাঁদাবাজি, দাঙ্গা হাঙ্গামা সহ নানা অসামাজিক কর্মকান্ড। কিশোর গ্যাংয়ের অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ওঠেছে সাধারণ মানুষ। এই কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধমুলক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় মুন্না আক্রমণের শিকার হন, এর পরে এমন পরিস্থিতিতে আর কাউকে যেন পরতে না হয়, তার জন্য এ মানববন্ধন ডাকা হয়েছে।এ বিষয়ে আহত শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুল মজিদ মিয়া বলেন, শহরের কিছু বখাটে ছেলে (কিশোর গ্যাং) আমার ছেলে মুন্না ইসলামকে জোর করে তাদের দলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু আমার ছেলে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এরই জের ধরে সেদিন রাতে তারা আমার ছেলেকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে আহত করেছে। বর্তমানে মুন্না ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।উপস্থিত কয়েক জনের সাথে কথা বললে তারা দৈনিক প্রথম বাংলা কে বলেন, বর্তমান সময়ে যে কোন অপরাধ চক্রের প্রথম সারিতেই কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের দেখা যায়। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং সদস্য মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং একটি আতংকের নাম যা ক্যান্সারের মত আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরিচয় দিয়ে সকল অপকর্ম করে থাকে।দল বেঁধে রাতের আঁধারে মটর সাইকেল মহড়া দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তাঁরা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে মুক্তিপন দাবি করে।সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক কে এ বিষয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এই কিশোর অপরাধের মুলে হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়।এটি ১০/১৫ বছর আগে এই কিশোর গ্যাং এর অস্তিত্ব ছিল না। সমাজের বয়বৃদ্ধরা সমাজের নেতৃত্ব দিতেন, কিন্তু দিন দিন সুযোগ সন্ধানী রাজনৈতিক ব্যক্তি তাদের স্বার্থে তরুণ প্রজন্ম কে ব্যবহার করে সমাজের বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে ফেলেন। ফলে সমাজে তরুণ প্রজন্মের কিশোর অপরাধের প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি মহল্লায় ৫/৭জনের সদস্য মিলে একটি কিশোর গ্যাং তৈরি হয়। তাঁদের বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। শুরু হয় তাঁদের প্রভাব বিস্তার ও অস্তিত্বের লড়াই।তবে প্রাথমিক ভাবে পারিবারিক শিক্ষা প্রয়োজন।তা ছাড়া প্রতিটি বাবা মায়ের উচিত তার সন্তান কোথায় যাচ্ছে,কি করছে, কাদের সাথে মিশছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিশোর অপরাধের ব্যপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।তাদের সাথে শৌআর্ধ আচরণ করতে হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর