নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদগাঁওতে মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরকে উপলক্ষ করে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত বিজয় মেলাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসছে উপজেলার সব রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমকর্মীরা। তাদের দাবি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিজয় দিবস উদযাপন ও বিজয় মেলা আয়োজন নিয়ে তারা ঘোর অন্ধকারে।নবাগত ইউএনও’র অব্যাহত আওয়ামী স্বৈরাচারী ভুমিকায় যে কোন মুহুর্তে জনবিস্ফোরণের আশংকা করছে সচেতন মহল।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ডিসেম্বর মাস শুরুর পর থেকেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন পরবর্তী আর্জিত নতুন স্বাধীনতার এসময়ে বিজয় দিবস উদযাপন ও বিজয় মেলা কোন্ আদলে হয় এ নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। দেরিতে হলেও পরিলক্ষিত হচ্ছে উপজেলার কোন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ও পরামর্শ ছাড়া নবাগত ইউএনও বিমল চাকমার নির্দেশনায় পতিত আওয়ামী স্বৈরচারী সরকারের সময়ের মত বিগত ৩/৪ দিন পূর্বে এলাকায় মাইকিং করে ঈদগাহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিজয় মেলায় স্টল নেয়ার প্রচারণা শুরু করে।ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিজয় মেলার নামে বিদ্যালয় মাঠের চারপাশে রাত দিন স্টল তৈরির কাজ চলছে। সুত্রে প্রকাশ, ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন দুই দিনের বিজয় মেলা উদযাপন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করেছে। তবে কমিটিতে কে বা কাদের রাখা হয়েছে তা এখনো অন্ধকারে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উদযাপন ও মেলার প্রস্তুতি কিংবা কর্মসূচি সম্পর্কে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী কিংবা রাজনৈতিক দলের কোন নেতৃবৃন্দ এখনো অবগত নয় বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আদৌ বিজয় দিবস উদযাপন কিংবা বিজয় মেলা কখন শুরু,কতদিন, অর্থায়ন এবং অংশীজন কে বা করা তা নিয়ে পুরো উপজেলাবাসী বলতে গেলে ঘোর অন্ধকারে। এ নিয়ে সর্বমহলে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। হয়ত মেলা শুরু কিংবা শুরুর পর এ নিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও হতে পারে। সচেতন মহলের অভিমত পলাতক আওয়ামী স্বৈরচারী সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া বিদায়ী ইউএনও সুবল চাকমার মত নবাগত ইউএনও বিমল চাকমাও যোগদানের পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের ৩/৪ সরকারি অনুষ্ঠানে উপজেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ না জানালেও তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের বিরোধিতাকারী আওয়ামী স্বৈরাচার ও তার দোসরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সামনের সারিতে স্থান দিয়ে বারবার কর্মসূচি পালন করছেন।এমনকি তার নিজ কার্যালয়ে বসিয়েও মতবিনিময় করেছেন। বিগত কিছু দিন যাবত গণমাধ্যমে তার এসব স্বৈরাচারী মনোভাবের সংবাদ ফলাও করে প্রকাশিত হলেও তার বিরুদ্ধে উর্ধতন প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ইউএনও বিমল চাকমা দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। যার ফলশ্রুতিতে পূর্বেকার আওয়ামী দোসর ইউএনও সুবল চাকমার পথে হেটে তিনিও ইতিমধ্যে গোপনে অনুমোদনের জন্য পাঠানো উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটি, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ও সদ্য গঠন করা বিজয় দিবস ও বিজয় মেলা কমিটির বিভিন্ন পদেও আওয়ামী দোসরদের স্থান দিয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
গোপন সূত্রে প্রকাশ, বিজয় দিবস কিংবা বিজয় মেলা উদযাপনে উপজেলা প্রশাসন থেকে দুই দিনের অনুমতি দেয়া হলেও পরে তা আরো ৩ দিন,১০ দিন কিংবা ১৫ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে বিশেষ একটি চক্র প্রশাসনকে ম্যানেজের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। এর পেছনে মোটা অংকের অর্থায়নে নেমেছে লটারির আড়ালে ডিজিটাল জুয়ার আসর পরিচালনার দায়ীত্ব পাওয়া সংঘবদ্ধ জুয়াড়ি চক্র। এ সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে সাধারণ জনতার মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে। তাদের দাবি দুই সহস্রাধিক ছাত্র জনতার জীবনের বিনিময়ে অর্জিত নবস্বাধীনতার সময়েও যদি পলাতক স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের মত বিজয় দিবস বা বিজয় মেলা উদযাপনে নবাগত ইউএনও আওয়ামী স্বৈরাচারী ভুমিকা অব্যাহত রাখেন তাহলে সাধারণ জনতা এর বিরুদ্ধে ফুসে উটতে পারে।
উপরোক্ত বিষয়ে উপজেলা বিএনপি আহবায়ক আবুল কালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিজয় মেলা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না,তবে উপজেলা সভাপতি এবং সেক্রেটারি হিসেবে তারা আমন্ত্রিত বলে শুধু এতটুকু জেনেছেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সেলিম মাহমুদ জানান, তিনি উপজেলা প্রশাসনের বিজয় মেলা আয়োজন সম্পর্কে অবগত নয় এবং তিনি ইতিমধ্যে বিজয় মেলার সাথে উপজেলা বিএনপির কোন সম্পর্ক নেই বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন।
উপজেলা জামায়েত আমীর মওলা সেলিম উল্লাহ জিহাদী ও সেক্রেটারি মওলানা নুরুল আজিম জানান, বিজয় মেলা সম্পর্কে তারা কোন ভাবেই অবগত নয় এবং কেন দায়ীত্বশীল সুত্র তাদের এ সম্পর্কে অবহিত করেননি।
গোপন সূত্রে প্রকাশ, উপজেলা প্রশাসনের বিজয় দিবস ও বিজয় মেলা উদযাপনে গঠিত কমিটি ও উপ কমিটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন মহলকে স্থান দেয়া হয়েছে। তবে যাদের কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে তারা নিজেরাও জানেননা তাদের কখন এবং কিভাবে কমিটিতে রাখা হয়েছে, তা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন।
তাদের প্রশ্ন উপজেলা প্রশাসন তথা নবাগত ইউএনও বিমল চাকমা কার পরামর্শে, তাদের কোন কিছু অবগত না করে এ কমিটি করলেন তা নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই। তাদের প্রশ্ন তিনি যোগদানের পর থেকে সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠান আওয়ামী স্বৈরাচার বিরোধী বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ না জানালেও নিয়মিত আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং নিজ কার্যালয়ে তাদের সাথে প্রকাশ্যে মতবিনিময় করেছেন এমন সংবাদ বিগত কয়েকদিন যাবত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন নিয়েও বিগত ইউএনও সুবল চাকমার মত স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করার দু:সাহস করেছেন। অবিলম্বে বিতর্কিত এ ইউএনও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সব রাজনৈতিক দল ও মহল তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুশিয়ারী দেন।
উপরোক্ত বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর আপাতত দুই দিন বিজয় মেলার অনুমতি আছে প্রশাসন থেকে। উপস্থিতি দেখে পরে বৃদ্ধি করা যায় কিনা ভেবে দেখা হবে বলে কথা শেষ করেন ।
উল্লেখ্য, ইউএনও বিমল চাকমা যোগদানের পর থেকেই একের পর এক তার বিতর্কিত ভুমিকায় চরম আলোচনা সমালোচনা মুখে পড়ছেন। যার মধ্যে রয়েছে যোগদানের পর সরকারি নির্দেশনা মেতাবেক বিগত ২৮ নভেম্বর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে আহত ও শহীদদের স্মরণে উপজেলা প্রশাসন কতৃক আয়োজিত বিগত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পক্ষের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী ও সুধীজনদের আমন্ত্রণ না জানালেও আন্দোলন বিরোধী আওয়ামীলীগ নেতা কথিত ডা: শামশুল হুদাসহ আওয়ামী দোসরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে স্থান দেন।
এরপর ৫ ডিসেম্বর মতবিনিময়ের নামে নিজ কার্যালয়ে ইউএনও টেবিলের সামনে আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হককে বসান। যার ছেলে ইসলামাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও পিতা জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী উপদেষ্টা।
এরপর তিনি আবারও গত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দূর্নীতি বিরোধী দিবস ও বেগম রোকেয়া দিবসের পৃথক সরকারি অনুষ্ঠানেও কোন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেননি। যা তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলেও উর্ধতন কতৃপক্ষ আওয়ামী দোসর ইউএনও বিমল চাকমার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি সর্বশেষ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস তথা জাতীয় দিবসের মত সরকারি অনুষ্ঠান নিয়েও এমন আওয়ামী দোসর নীতি বাস্তবায়নের দু:সাহস দেখাচ্ছেন ।
Leave a Reply